"মক্কা বিজয়ে রাসূল (সা.)-এর মহানুভবতার দৃষ্টান্ত"

মক্কা বিজয়ের উদ্দেশ্যে ৮ম হিজরির ১০ রমজান প্রায় ১০ হাজার সাহাবী নিয়ে রাসূল (সা.) মদিনা ত্যাগ করেন। পথিমধ্যে তিনি শিবির স্থাপন করলেন। আবু সুফিয়ান ছদ্মবেশে শিবিরের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য এলে ধরা পড়ে যান। তাকে মহানবী (সা.)-এর কাছে নিয়ে আসা হলো। করুণার মূর্ত প্রতীক রাসূল (সা.) তাকে ক্ষমা করে দেন। আবু সুফিয়ান মহানবী (সা.)-এর মহানুভবতায় এবং ইসলামের মহান উদার নীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। পরদিন মহানবী (সা.) শান্তিপূর্ণভাবে মক্কায় প্রবেশ করলেন এবং যে কোনো প্রকার রক্তপাত থেকে বিরত থাকতে সকলকে নির্দেশ দিলেন।

মক্কা বিজয়ের দিন সমস্ত অপরাধীরা যখন রাসূল (সা.)-এর সামনে নতজানু হয়ে উপস্থিত হলেন, তিনি জিজ্ঞেস করলেন- “তোমরা আমার নিকট কীরূপ আচরণ প্রত্যাশা করো?” তারা সম্মিলিত কণ্ঠে জবাব দিলো- “হে সত্যবাদী, হে বিশ্বস্ত! আপনি আমাদের সম্ভ্রান্ত ভাই, সম্ভ্রান্ত ভ্রাতুষ্পুত্র। আমরা সর্বদাই আপনাকে দয়ালুরূপে পেয়েছি।” রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন- “এখন আমি তোমাদের তা-ই বলব, যা হযরত ইউসুফ (আ.) তাঁর ভাইদের বলেছিলেন। “আজ তোমাদের থেকে কোনো প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে না; আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনি সবচেয়ে অধিক মেহেরবান।” (সূরা ইউসূফ-৯২) (সীরাত ইবনে হিশাম)।

অতঃপর এক ভাষণে মহানবী (সা.) মক্কাবাসীর প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন। এভাবেই প্রিয়নবী তাঁর শত্রুদের প্রতি এক দৃষ্টান্তমূলক ক্ষমা প্রদর্শনের স্বাক্ষর রাখলেন। কোনো বিজয়ী তাঁর শত্রুদের এভাবে ভালোবাসা ও দয়া প্রদর্শন করতে পারে- ইতিহাসে তেমন নজির খুঁজে পাওয়া যায় না। কবি নজরুলের ভাষায়-“দেখিতে দেখিতে তরুণ নবীর সাধনা-সেবায়, শত্রু-মিত্র সকলে গলিল অজানা মায়ায়।”

মক্কা বিজয়ের পর ১০ জন লোক এমন ছিল- যাদের অপরাধের পরিমাণ এত বেশি ছিল যে, তারা ছিল ক্ষমার অযোগ্য। তাই এই ১০ জনকে হত্যার নির্দেশনা জারি করা হলো। তাদের মধ্যে একজন ছিলো হাব্বার ইবনে আসওয়াদ। তিনি বলেন- “পালিয়ে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে কোনো রকমে আত্মগোপন করে নবীজির দরবারে উপস্থিত হলাম এবং আরজ করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! জানি, আমি পাপী। আমি ক্ষমার অযোগ্য, কিন্তু এখন আমি ক্ষমাপ্রার্থী এবং ইসলাম কবুল করলাম। এখন আমার জন্য হুকুম কী?” রাসূল (সা.) বললেন- “তোমাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো।” (আস সিরাহ আন নাবাবিয়্যাহ)

রাসূল (সা.) এর ক্ষমা প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক এডওয়ার্ড গিবন বলেন- “In the long history of the world there is no instance of magnanimity and forgiveness which can approach those of Muhammad (Sm.) when all his enemies lay at his feet and he forgave them one and all.”

তাই আসুন, প্রিয় নবীজির অনুসারী হিসেবে ক্ষমা ও মানবিকতার চর্চা করি। যা আপনাকে ছোট করবে না, বরং সম্মান বৃদ্ধি করবে। যে রক্তের ওপর আজ কিছুটা বিজয়ের স্বাদ পেয়েছেন, তা যেন অল্পতে ম্লান হয়ে না যায়।

- জাহিদুল ইসলাম
সেক্রেটারি জেনারেল, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

মন্তব্য